দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তের বিষয়ে দুই ধরনের বক্তব্য এসেছে। বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক নেতা ও আইনজীবীরা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত সংবিধান ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। গণতন্ত্র হরণের শামিল। অন্যদিকে সরকারের সঙ্গে যুক্তরা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেটা মনে করবে, তা সরকারকে বলতে পারে। যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে দেশের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী বললেন, এ নিয়ে কথা বলতে হলে পুরো সংবিধানের ৩৬ হাজার পৃষ্ঠা পড়তে হবে। সেই সঙ্গে ৫০ হাজার বিধি ও ইসি নিয়ে ২০টি পৃষ্ঠা পড়তে হবে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত দেশে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বন্ধের উদ্যোগ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে কমিশন সভায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। দলগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। নেতারা বলছেন, ইসি এমন চিঠি দিতে পারে না। তাদের এ সিদ্ধান্ত সংবিধান লঙ্ঘন।
সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘কমিশন যদি মনে করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, কর্মসূচি বাধা হতে পারে তাহলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেটা মনে করবে, তা সরকারকে বলতে পারে। আমার জানা মতে, নির্বাচন কমিশনের সীমাবদ্ধতা নেই। আরপিওর বাইরে কিছু বলা আছে কিনা দেখা হয়নি। নির্বাচনের সময় আমরা যখন রিটার্নিং অফিসার ছিলাম তখন কমিশন যে কথাগুলো বলেছে আমরা তা পালন করেছি। এখন নির্বাচন কমিশন যেহেতু সরকারকে লিখেছে (নির্দেশনা), সরকার তা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখবে।’ তবে তাদের এ মতামতের সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেছেন বিরোধী শিবিরের নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, সিইসি নিজেকে একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান মনে করতেই পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে আমার গণতান্ত্রিক অধিকার, কথা বলার অধিকার, রাজনৈতিক সভা করার অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে পারেন না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যে চিঠি দিয়েছে এটা প্রকারান্তরে দেশে একটা জরুরি আইন জারি করার কথাটাই বলল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এটা গ্রহণ করবে না। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধে চিঠি দিতে পারে না। কাউকে জোর করার অধিকার নেই।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন যে চিঠি দিয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে এখতিয়ারবহির্ভূত। এই সিদ্ধান্ত সংবিধানকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত। তবে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধে চিঠি দিতে পারে না। সরকারের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক ইসি এই চিঠি দিয়েছে।
https://slotbet.online/