Kabirhat news
Saturday, 20Th Jan’ 2024.
17:20 Pm.
www.kabirhatnews.com
কবিরহাটের হিন্দু ব্যবসায়ী ক্ষুদিরাম শাহা মানুষের প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে।
ক্ষুদিরাম সাহা নোয়াখালী জেলার কবিরহাট উপজেলার কবিরহাট পৌর বাজারের বাজারে মুদি দোকানদার।
তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম আর,জি ভান্ডার।
কবিরহাট দক্ষিণ বাজারে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে
বেশ কয়েকমাস যাবত এলাকার মানুষের কাছে বাজার দরের চাইতে কিছুটা কম মূল্যে পন্য বিক্রি করায় তার দোকানে বিক্রি অনেক গুন বেড়ে যায়।
কিন্তু গতকাল সকাল থেকে হঠাৎ তার দোকান বন্ধ থাকায় পাওনাদাররা তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে।
আশপাশের ব্যবসায়ী,পরিচিতজন কেউ তার সন্ধান দিতে পারে না।
গতকাল সকাল থেকে ক্ষুদিরাম সাহা, তার ছেলে পিযুষ সাহা, নয়ন সাহা এদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এই ক্ষুদিরাম সাহার বাড়ি নাকি চর আলেকজান্ডার, কবিরহাট বাজারের এক কিলোমিটার দক্ষিণে নতুন সাহাজির হাট এলাকায় তার শ্বশুরবাড়ি।
এই ক্ষুদিরাম সাহা চর আলেকজান্ডার থেকে এসে গত কয়েক বছর যাবত নতুন সাজিরহাট এলাকায় তার শ্বশুর বাড়িতে থাকতো।
কিন্তু গত বছর দুয়েক আগে শ্বশুরবাড়ির জায়গা সম্পত্তি বিক্রি করে পরিবার-পরিজনকে ভারত পাঠিয়ে দিয়ে সে নতুন সাহাজির হাট এলাকায় একটি ভাড়া ঘরে থাকতো।
কিন্তু গতকাল তার দোকান বন্ধ থাকায় তাকে না পেয়ে পাওনাদাররা আশপাশের ব্যবসায়ীদের জানায়, তারা তার কাছে অনেক টাকা পাওনা।
পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী রহিম স্টোরের মালিক ইমরান জানায়, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এক কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছে গত সপ্তাহে তারা ক্ষুদিরাম সাহাকে ৫ লক্ষ টাকা লোন দিয়েছে, এই লোনের কিস্তি টাকার জন্য এসে এখন তারা তাকে খুঁজে পাচ্ছে না।
কবিরহাটের দ্বীপ উন্নয়ন ব্যাংক লোন বাববত প্রায় ৫ লক্ষ টাকা,
ফেনীর প্রাণ কোম্পানির ডিলারের ৫-৬ লক্ষ টাকা,
কবিরহাট বাজার কমিটির সহ-সভাপতি পাইকারি ব্যবসায়ী আহসানউল্লার ৮০,০০০/-
পূর্ব বাজারের মতিন ট্রেডার্সের ১৫০,০০০/-
পলেথিন দোকানদার দুলাল মিয়ার ১৫, ০০০/-
ইন্দ্রপুরের সবুজ জানায়, খুদিরাম সাহা চৌমুহনীতে তার মহাজনদের হালখাতার কথা বলে গত সপ্তাহে আমার কাছ থেকে ১২,০০০/- টাকা ধার নিয়েছে।
গতকাল আমার টাকা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু টাকা না দিয়ে গতকালই সে পালিয়ে গেছে।
এভাবে আরো অনেকের কাছ থেকেই সে কয়েক লক্ষ টাকা ধার নিয়েছে।
কারো দেনাই সে পরিশোধ না করে রাতের আঁধারে ভারত পালিয়ে গেছে বলে তারা ধারণা করছে।
কারণ ইতিপূর্বে কবিরহাটের দুইজন কসমেটিক দোকানদার এবং পরিতোষ হরি সহ আরো দুই জন হিন্দু স্বর্ণ ব্যবসায়ী মানুষের টাকা পয়সা এবং বন্ধক রাখা প্রায় ২-৩ কোটি টাকার স্বর্ণালংকার নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে।
ক্ষুদিরাম সাহা পালিয়ে যাওয়ায় পাওনাদাররা তাদের টাকার জন্য এখন হায় হায় করছে।
এ বিষয়ে কবিরহাট উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবু প্রদোষ পালের কাছে জানতে চাইলে, প্রদোষ বলেন এই ঘটনায় আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরাও খুবই চিন্তিত এবং মর্মাহত।
কারণ কবিরহাট বাজারের যেসব হিন্দু ব্যবসায়ীরা বিগত ৪০ পঞ্চাশ বছর যাবত অত্যন্ত সততার সাথে, বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে সাধারণ মানুষের মনে যে জায়গা তৈরি করে নিয়েছে,
এই ক্ষুদিরাম এবং পরিতোষ হরির মত দুই চারজন অসৎ হিন্দু ব্যবসায়ীর প্রতারণার কারণে সৎ হিন্দু ব্যবসায়ীদের প্রতিও মানুষের আস্থার সংকট দেখা দিতে পারে।
এই ঘটনা খুবই নিন্দনীয়!
আমরা এইসব প্রতারকদের শাস্তি দাবি করি।
কবিরহাট বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন টিপু বলেন, এদের প্রতারণার কারণে আমরা নিজেরাও বিব্রত।
এরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে কৌশলে মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে।
এর পর বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা পয়সা নিয়ে প্রতিষ্ঠান রেখে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়।
টিপু আরো বলেন, এবিষয়ে আমি আজ সকাল বেলা বাজারে এসে জানতে পেরেছি, এরপর আমাদের বাজার কমিটির সভাপতি এবং কবিরহাট পৌরসভার মেয়র জহিরুল হক রায়হান সাহেবকে ফোনে ঘটনা জানিয়েছি।
তিনি আমাকে আজ সন্ধ্যার পরে একত্রিত হতে বলেছেন।
টিপু বলেন, একটা ঘটনা শেষ করতে না করতেই এই প্রতারক আরেকটা ঘটনার জন্ম দিয়েছে।
পরিতোষ হরির নিকট অনেকেই টাকা পাওনা আছে বলে আমাদের জানিয়েছে। আমরা পরিতোশ হরির দোকানে কোন স্বর্ণ গয়না পাইনি। শুধু সামান্য সুতা পেয়েছি, সেই সুতা গুলো বিক্রি করে এবং তার দোকানের এডভান্স বাবদ দেওয়া দেড় লক্ষ টাকা আদায় করে পাওনাদারদের মধ্যে আনুপাতিক হারে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
গতকালের ঘটনায় আমরা মেয়র সাহেবের সাথে একত্রিত হলে কি করা যায় এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।
তবে পরিত হরির প্রতারণার বিষয়ে দুটো মামলা হয়েছে বলে আমি জেনেছি।
এদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত।
এসব পাওনাদার এবং কবিরহাট বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীদের প্রশাসনের নিকট দাবি এই ক্ষুদিরাম কে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে যেন তাদের পাওনা টাকা গুলো ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
এই প্রতিবেদন লিখার সময় জানা যায় কবিরহাটের বাবুল নামের এক ব্যবসায়ী ব্যাংকে জম্মদার হয়ে তাকে বিশ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে দিয়েছে, সেই লোনের টাকাও পরিশোধ না করে সে পালিয়ে গেছে।
এছাড়াও চৌমুহনী, ফেনী সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওনা দাররা ক্ষুদিরামের কাছে প্রায় দুই কোটি টাকা পাবে বলে জানিয়েছে।
—নিজস্ব প্রতিবেদক,
কবিরহাট নিউজ।
https://slotbet.online/