আজ ২৩ শে জুন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।
কবিরহাট নিউজ, নিজস্ব প্রতিবেদক।
২৩ শে জুন ২০২৪ ইং, ৪:৪৫ অপরাহ্ন।
আওয়ামী লীগ শুধু বাংলাদেশেরই প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন নয়, উপমহাদেশেরও অন্যতম প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম।
১৯৪৯-২০২৪ :
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরই বাঙালি জাতির উপর বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু হয়। প্রথমেই মাতৃভাষার উপর আঘাত আসে। পাকিস্তানী শাসকদের শোষণ, বঞ্চনার প্রতিবাদে প্রগতিশীল নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে গঠন করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ।’
আওয়ামী লীগ গঠন সম্পর্কে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হল আওয়ামী মুসলিম লীগ। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, জনাব শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং আমাকে করা হল জয়েন্ট সেক্রেটারি।’ ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু তখন কারাবন্দী ছিলেন।
আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। ’৫২ সালেই বঙ্গবন্ধু ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ‘মুকুল’ প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন থেকেই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব বঙ্গবন্ধুর কাঁধে অর্পিত হয়।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠন দলটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সে নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ট পায়। ২৩৭ আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩ টি এবং মুসলিম লীগ মাত্র ৯ টি আসন পায়। যুক্তফ্রন্টের শরিক আওয়ামী লীগ একাই ১৪৩ টি আসন।
বঙ্গবন্ধু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরের কাউন্সিলেই দলটিকে সব ধর্মের মানুষদের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত দলীয় কাউন্সিলে দলের নাম পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দেয়া হয়।
১৯৫৭ সালের সম্মেলনে দলে প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। মাওলানা ভাসানী পদত্যাগ করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।
১৯৬৬ সালের ৬ দফা বাঙালির ইতিহাসে অত্যন্ত টার্নিং পয়েন্ট। বঙ্গবন্ধু লাহোরে বিরোধী দল গুলোর সম্মেলনে ৬ দফা পেশ করেন। ছয় দফার পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রহমান বাঙালির একক নেতায় পরিনত হন।
বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আইয়ুব খান সরকারের পতন ঘটে।
বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত টানা ১৪ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালের ১ মার্চ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৬৬-এর ছয়দফা, ‘৬৯ -এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন ও ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভ করেছে।
১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করে। কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। আওয়ামী লীগের এই বিজয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলার অবিসংবাদিত নেতায় পরিনত করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার বৈধ প্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্যগণ ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল কারাবন্দি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে প্রবাসী সরকার গঠন করেন। এই প্রবাসী সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে (১২ জানুয়ারী ১৯৭২ সাল থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫) মাত্র সাড়ে তিন বছর সরকারে ছিলো আওয়ামী লীগ। এসময়ের মধ্যে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন গুলো হলো:সংসদীয় গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মাত্র দশ মাসে একটি সংবিধান জাতিকে উপহার দেয়া, ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার, ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত প্রায় এক কোটি লোককে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করা, বিশ্বের ১৪০ টি দেশের স্বীকৃতি লাভ করা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর দেশি-বিদেশি ষড়ডন্ত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ে।
১৯৮১ সালে দিকভ্রান্ত আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এরজন্য তাকে চরম ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, হামলা-মামলা সহ অনেক কঠিন ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। তবুও বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে একটুও পিছপা হননি।
দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছর এবং বাংলাদেশের সেসময়কার সময়ের মধ্যে সে সরকারই প্রথম বাবের মত তাদের মেয়াদ পূর্ণ করে। তখন সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
তা হলো:
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের পথ সুগম করতে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব প্রবর্তন, সংসদকে শক্তিশালী করতে মন্ত্রীর পরিবর্তে সংসদ সদস্যদের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা, ভারতের সাথে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি স্বাক্ষর, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সম্পাদন, স্থানীয় সরবার নির্বাচনে মহিলাদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মান, মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক অনুদান প্রদান এবং বাঙালির গৌরব ভাষা আন্দোলন (২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২) ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন।
দ্বিতীয় দফায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে আওয়ামী লীগ। সেই থেকে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের সকল অমীমাংসিত বিষয় গুলো নিস্পতি করেছেন। জাতির পিতা হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন করা, ৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর, ’৭২-এর সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পতি, ভারতের সাথে দীর্ঘ ৬৮ বছরের পুরোনো স্থল সীমানা বিরোধ নিস্পতি, সহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত করেছেন।
এছাড়াও ডিজিটাল সেবাকে দেশের প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া, শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিতকরণ, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই বিতরণ, দারিদ্র্য হ্রাস, মাথা পিছু আয় প্রায় তিন হাজার ডলারে উন্নীতকরণ, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প সহ অনেক জনবান্ধব কাজ করেছে সরকার।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার তলাবিহীন ঝুঁড়ির তকমা ঘুচিয়ে, বিশ্বের বুকে এখন উন্নয়নের রোল মডেল। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মান করে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। রূপপুরে নির্মান করা হচ্ছে পারমানবিক বিদ্যুতকেন্দ্র। আওয়ামী লীগ সরকার ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন করে ভিশন-২০৪১ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানের দিকে এগিয়ে চলছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই জনগনের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেছে, আর বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় জনগণের অধিকার আদায়ে কাজ করেছে। বাংলাদেশের সকল অর্জনের মূলে রয়েছে আওয়ামী লীগের অবদান।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ৭৫ বছরের পথ চলার অধিকাংশ সময়েই নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা একে অপরের পরিপূরক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ যেমন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে, ঠিক তেমনি দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশে পরিনত করেছে।
https://slotbet.online/