কবিরহাটে দাফনের ৩৬ দিন পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন।
নিজস্ব প্রতিবেদক: কবিরহাট নিউজ,
বৃহস্পতিবার ১৩ই জুন, ২০২৪ ইং, ২:৩০ পূর্বাহ্ন
নোয়াখালী জেলার কবিরহাট উপজেলায় মৃত্যুর ৩৬ দিন পর মো. আলাউদ্দিন (২৫) নামে এক বাস হেল-পারের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
বুধবার দুপুর ১২টায় কবিরহাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমৃত দেবনাথের উপস্থিতিতে উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নরসিংহপুর গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে লাশটি উত্তোলন করা হয়।
এর আগে, গত ১ মে উপজেলার পার্শ্ববর্তী নরোত্তমপুর ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যার বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হয়ে আলাউদ্দিন মারা যান বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পিতা। নিহত আলাউদ্দিন উপজেলার বাটিয়া ইউনিয়নের মহিন উদ্দিনের ছেলে।
জানা যায়, এ ঘটনায় গত ৩ জুন নিহতের মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ উল্যাহকে প্রধান আসামি করে নিশান (২২) ও কবির (৩০) নামে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত নামা আরও ৫/৬ জনকে আসামি করে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪নং আমলি আদালতে সিআর মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে কবিরহাট থানা পুলিশ হত্যা মামলা রুজু করেন।
নিহতের বাবা মহিন উদ্দিন অভিযোগ করেন,
‘আমাদের বাড়ির জায়গা নিয়ে সমস্যা হলে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যার কাছে বিচার প্রার্থনা করি একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে আমাদেরকে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কিছু না বলে তিনি নিজেই জায়গাটি ক্রয় করে নিতে চায়।
ওই জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ১ মে রাত ৯টার দিকে সিরাজ চেয়ারম্যান লোক পাঠিয়ে আমার ছেলে আলাউদ্দিনকে তার বাড়িতে ডেকে নেয় এবং সেখানে দুই দিন আটকে রেখে।
এ সময় তার অনুসারী নিশান ও কবিরসহ তারা আমার ছেলেকে লোহার রড, জিআই পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা, হাঁটু, চোখসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম করে মারাত্মক ভাবে আহত করে।
পরে কে বা কাহারা গুরুত্বর আহত অবস্থায় আলাউদ্দিনকে কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থার অবনতি হলে ৫মে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ৬ মে ভোর রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হলে গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে আসার পর ৭ মে তাকে পারিবারিক করস্থানে দাফন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ সিরাজ চেয়ারম্যানের বড় ভাই ডা.জাফর উল্যাহকে ফোনে জানানো হলে তিনি বিষয়টি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসলে সুরাহা করবেন বলে জানায়।
এরপর তিনি চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে চিকিৎসার কাগজপত্র না দিয়ে শুধু মাত্র আমার ছেলের মৃত্যুর সনদ দিয়ে রিলিজ করে দেওয়ার জন্য।
১নং আসামি চেয়ারম্যান সিরাজের বড় ভাই ডা. জাফরের কালক্ষেপণের কারণে আমাদের মামলা করতে বিলম্ব হয়। তিন বছর আগে এই সিরাজ চেয়ারম্যান আমাকেও তুলে নিয়ে মারধর করেছিলো ওই জমির বিষয় নিয়ে।
নরোত্তমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এক সময় তারা জমি বিক্রি করতে চেয়েছিল আমি ক্রয় করিনি। আমি এক একজন জনপ্রতিনিধি আমার কাজ হচ্ছে মানুষের জানমাল রক্ষা করা। আমি কোন ভাবেই এই ঘটনার সাথে জড়িত নই, কিন্তু এর পরও কারো প্ররোচনায় তারা আমাকে মামলায় আসামি করেছে।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, নিহতের মা আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত থানায় মামলাটি রুজু করার নির্দেশ দেয়।
আদালতের আদেশে তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা রের্কড করা হয়েছে। একই সাথে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তের স্বার্থে কবর থেকে ভিকটিমের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।
মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি ও ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তদন্ত করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা প্রতিনিধি – কবিরহাট নিউজ
https://slotbet.online/