১৮ বছর ধরে বিদ্যুতের কাজ করেই সংসার চালান জন্মান্ধ রিপন!
অন্ধত্বকে জয় করে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের কাজ সফলভাবে করে চলেছেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরহাজারী ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের তের বাড়ি সমাজের মরহুম আব্দুস সোবহানের ছেলে ইমরোজ হোসেন রিপন (৩৬)। সে একজন জন্মান্ধ যুবক।
জন্মান্ধ এই যুবক হতে পারতো সমাজ কিংবা পরিবারের বোঝা, কিন্তু দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাও যে মানুষের জন্য কোনো বাধা নয়, জীবনের লড়াইয়ে চেষ্টা করে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবেই, এমনটাই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন প্রবল আত্মবিশ্বাসী এই যুবক। ইচ্ছে পূরণের স্বপ্নে বিভোর মনের আলোয় উদ্ভাসিত এ যুবক ইচ্ছে মাফিক পেশাতেও হয়েছিলেন একজন ইলেকট্রিক ও প্লাম্বার মিস্ত্রি। সে অনুযায়ী বাড়ির পাশে করছেন ছোট্র একটি ইলেকট্রিক দোকানও।
শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কারো কাছে হাত না পেতে করে চলেছেন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ইলেকট্রিক ও পাইপ ফিটারের কাজ। যেখানে সক্ষম ব্যক্তিরাই থাকে অক্ষম সেখানে দৃষ্টি অক্ষমতা নিয়েও এমন কাজ করে চমক সৃষ্টি করেছেন রিপন। এলাকাবাসীরা তার এমন প্রয়াসে অনুপ্রাণিত। স্থানীয়রা জানায় রিপন নিজেই নিজের অনুপ্রেরণার বাতিঘর।
১৯৮৬ সালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চর এলাহী ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণ করেন রিপন। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সে চতুর্থ। বর্তমানে তার মা’ দুই ছেলের সাথে আমেরিকায় থাকেন। আমেরিকা প্রবাসী বড় বোন সুমনা ও বড় ভাই ডাক্তার শাহজান আক্তার এবং ছোট ভাই শিপনের সহযোগিতায় বাবার দিয়ে যাওয়া গ্রামের বাড়িতে স্ত্রীসহ এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছে রিপন।
ছোটবেলায় যখন নিজ গ্রামে বিদ্যুতায়ন শুরু হয় রিপনের মধ্যে তখন ইলেকট্রিকের কাজ শেখার স্বপ্ন জাগে। কিন্তু এতে বাধা দেন মা-বাবা ও বারবার সতর্ক করেন স্থানীয় ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরা। রিপন নাছোড়বান্দা একা একা নিজেদের বসত ঘরে ইলেকট্রিকের কাজ শিখতে চেষ্টা চালায় সে। একপর্যায়ে এ নিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে তার মা-বাবা। এ কারণে ইলেকট্রিকের কাজ করার যন্ত্রপাতি লুকিয়ে রাখতেন তিনি। এরপর ঘর থেকে বের হয়ে পরিবারের দৃষ্টির আড়ালে বারান্দায় গিয়ে কসরত চালায় রিপন।
সেখানে একাকী বসে বসে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টার পর আয়ত্ত করে ইলেকট্রিক, প্লাম্বার ও সোলারের কাজ। এরপর তিনি গত ১৮ বছর ধরে নিজ গ্রামে বেশ কয়েকটি মসজিদসহ প্রায় ২০০ টি ঘরের ইলেকট্রিক কাজ সম্পন্ন করেন। এছাড়াও টুকিটাকি অসংখ্য মেরামতের কাজ করে চলেছেন।
নিজের গ্রামের আঁকাবাঁকা সকল রাস্তাই যেন তার চিরচেনা। কারো সহযোগিতা ছাড়াই রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারেন রিপন। একা একা যান নিজের দোকানে। কারো সাহায্য ছাড়াই গোসল থেকে শুরু করে খাবার সবই করেন নিজে হাতে। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি রিপন। তবে আত্মনির্ভরশীল মানসিকতা সম্পন্ন হওয়ায় তিনি সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পেতেও নিজ থেকে তেমন আগ্রহী নয়।
রিপনের স্ত্রী শাহিনা আক্তার বলেন, স্বামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও অন্যদের থেকে সে পুরোপুরি আলাদা। সে নিজের সকল কাজ নিজে করতে পারে।
চর হাজারী ইউপি সদস্য মো.জাহাঙ্গীর আলম শিপন বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা যে স্বপ্ন পূরণের জন্য বাধা নয় তার উজ্জল দৃষ্টান্ত রিপন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও অবিরাম ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজের পিছনে ছুটে চলেছেন। দৃষ্টি তার সামনে এগোনোতে কোনো বাধা হতে পারেনি, উল্টো সে এক অনুপ্রেরণার নাম। ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী রিপন কারো বোঝা না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। তার এ উদ্যম ও মনের শক্তি সমাজের প্রতিটি মানুষের কর্মজীবনকে প্রভাবিত করবে এমনটাই সকলের প্রত্যাশা। তাকে খুব দ্রুত একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে।
সূত্র: সময়ের কণ্ঠস্বর।
https://slotbet.online/